সাবধান
আমি বেজায় সাবধানী মানুষ। বেসিকালি ভীতু বললেই ঠিক হয়। কক্ষনো দৌড়ে চলন্ত বাসে উঠিনা (হে হে, এই বপু নিয়ে?), বসের মুখে মুখে তক্কো করিনা (আমার বাপু চিরকাল বেশ প্রেমময় বস জোটে, আর এখনকারটি তো সদাহাস্যময়), জন্তুজানোয়ার পোকামাকড়দের সমঝে চলি (সেই শিশুকালে শুঁয়োপোকা খেতে চেষ্টা করার পর থেকে), খাবার আগে ভালো করে হাত ধুই (কাঁটা চামচে খেলেও। ওব্বেশ।) আর ভেজ বিরিয়ানি খাবার কথা কল্পনাতেও আনিনা।
নেহাত নিরীহ, নাদান, নাজুক মানুষ, বুঝতেই পারছেন। তারপরও আপিশ যাবার সময়ে যখন শুনতে হলো “সাবধানে যেও”, আমার সিরিয়াস ভাবুকস্বভাব গভীর চিন্তায় পড়ে গেলো। এছাড়া আরো কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ভাবতে ভাবতে হাঁটার ফলে আরেকটু হলেই গোবরে পা পড়তে যাচ্ছিল। তারপর বাসে উঠে ব্যাগ-ট্যাগ সবশুদ্ধু নিজেকে সীটে সমর্পিত করা অবধি গভীর ভাবনাচিন্তা করে এই দশখানা পয়েন্ট দাঁড় করালুম। তারপর আমার বন্ধুপ্রীতি, মনুষ্যহিতাকাঙ্ক্ষা, উপচিকীর্ষা ইত্যাদির দ্বারা সুড়সুড়ায়িত হয়ে মনে হল এগুলো আপনাদের সাথেও শেয়ার করা উচিত। কথায় বলে, সাবধানের মার নেই! (মার না থাকলেই অনায়াসে বোধি লাভ হয় কিনা তা কিন্তু জানি না!)
তো নিন মশাই, আমার ‘আপিশ যাবার পথে সাবধান হবার টেন কম্যান্ডমেন্টস’।
১. রাস্তায় কুকুর দেখলে তার ল্যাজ ধরে টানবো না। এমনকি সোজা করার চেষ্টাও করবো না।
২. অটো বা স্কুটার বা সাইকেলের গতিপথে টাইটানিকের-হিমশৈল-সম দাঁড়িয়ে পড়বো না।
৩. জেটের স্পীডে হাঁটি বলেই যাকে তাকে ঢুঁসিয়ে দেবো না। কনুইয়ের গোঁত্তাটা ক্ষমার্হ, মেরেই থাকি।
৪. বাসের জানলা দিয়ে হাত বার করবো না। মুন্ডুও না। এমনকি বোঁচা নাকটুকুও না।
৫. চলন্ত ঘুরন্ত বা থামন্ত, কোনরকম পাখায় আঙুল দেবো না। নেহাত আঙুল চুলবুল করলে, নিজের কান চুলকোবো।
৬. বাসের ধরে দাঁড়ানোর রড ধরে দোল খাবো না, খেতে গিয়ে হাত পিছলে, বা যেটা আরো বেশি সম্ভব, রড ভেঙে ধপাস করে কুমড়োগড়াগড়ি হবো না।
৭. বাসে ওঠার সময়ে ড্রাইভার দাদাকে ভেংচি কাটবো না। নামার সময়ে “কী ভালো চালালেন মশাই” বলে বগ দেখাবো না পর্যন্ত।
৮. গানে তাল দেবার ভান করে সামনের সীটে বসা গোমড়ামুখো ভদ্রলোকের টাকে চাঁটি মারব না। ম্যাগাজিন পাকিয়ে কানের কাছে আচমকা ‘কু’ করব না। সীটের ফাঁক দিয়ে পেন গলিয়ে কোমরে কাতুকুতুও দেব না।
৯. জুতো খুলে জুত করে বসতে গিয়ে সীটের খাঁজে পশ্চাদ্দেশ খাপে খাপ আটকে ফেলে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ করে চিল্লাবো না।
১০. পরের স্টপে বেহদ্দ সুদর্শন ছোকরাটি উঠলে, তার দিকে আড়ে আড়ে চাইব না। এমনকি সে প্রায়দিনের মত আজও পাশে এসে বসলেও না।
আপনাদের আরো যদি কিছু মাথায় আসে, এই নেহাত ভালোমানুষ লক্ষীমেয়েটিকে সাবধানে রাখার জন্য, ভালোবেসে বলে ফেলুন দিকি!
পলাশপ্রিয়া
July 23, 2021 - 11:23 am ·আরেকটি পয়েন্ট, কাউকে মাস্ক পরতে না দেখেও ক্ষেপচুরিয়াস হয়ে তার নাকে একটা রদ্দা কসানো যাবেনা। বড় জোর চোখ গোল করে ভয় দেখানো যেতে পারে