অভিজ্ঞতা

অভিজ্ঞতা

অভিজ্ঞতা হি অভিজ্ঞতা।

 

যখনই এয়ারপোর্টের ক্যাব একদম মিনিমাল প্রাইসে পেয়েছি তখনই জানি এত সুখ আমার সইলে হয়! পৌঁছেছি, লাইন দিয়েছি, পুলিশ অফিসারের চারবার করে আমার নাম আধারের নামের সঙ্গে আর আমার মুখচন্দ্রিমা (বলবই তো চন্দ্রিমা। কী সুন্দর চাঁদের মতো গোল্লাপানা মুখ!) আধারের ছবির সঙ্গে মিলিয়ে (আমার অতি অপ্রচলিত নামের কারণে) দেখার পর ঢুকেছি… চেক-ইন-টাও করে ফেলেছি সুন্দর করে…

 

এমন সময়ে চেক-ইন-কারী যুবক প্রবল আঁতকে উঠল৷ আমি ধরেই নিলাম ভুলভাল সময় দেখে এসেছি ও ফ্লাইট মিস করেছি।

 

তারপর জানা গেল ফ্লাইট পালটাইয়াছে। এবং কয়েকদিন আগে থেকে সেই নতুন ফ্লাইট আবার টি-২ (মানে যেখানে আমি দণ্ডায়মান) র বদলে টি-১ থেকে ছাড়ছে৷

 

এমনই অবস্থা, আমি তো বটেই, এমনকি এয়ারলাইন্সের লোকও জানে না। আমি নোটিফিকেশন পাইনি কেন কে জানে, আর এদের কী হয়েছে আমি জানি না। বোর্ডিং পাসে প্রিন্ট হওয়া গেট নাম্বার দেখে তাদের টনক নড়েছে যে এটা তো টি-১!

 

দুটো টার্মিনালের মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব। এবং মুম্বইয়ের অফিসফেরত ট্রাফিকবেলা। উপায়?

 

সে যুবক তড়িঘড়ি বেরিয়ে এল তার খোপ থেকে। “হবে ম্যাম, হয়ে যাবে। আপনি ট্রান্সফার শাটল করে চলে যান।”

 

সৌভাগ্যক্রমে আমার স্যুটকেস ততক্ষণে নাচতে নাচতে সামান্যই এগিয়েছিল। ছোকরা লাফিয়ে পড়ে তাকে উদ্ধার করল। তারপর একহাতে ট্রলি আর একহাতে বোর্ডিং পাস নিয়ে সে দৌড়ল গেট দিয়ে আমায় বার করে দিতে।

 

কিন্তু গেটের পুলিশ আমায় কিছুতেই বেরোতে দেবে না। ‘কই নোটিফিকেশন যে তোমাদের ফ্লাইট পালটেছে?’ ছ ফুটের বেশি সাজোয়ান মিলিটারি অফিসার আর ফর্সা গোলগাল গালফুলো এয়ারলাইন্সের কর্মী তর্ক করছে, ঝগড়া করছে; আর আমি “ওরে! আমার প্লেন মিস হয়ে যাবে রে! ওরে! আমি দুষ্কৃতকারী নই রে!” বলে তিড়িং তিড়িং করে লাফাচ্ছি। সে এক কাণ্ড!

 

তারপর যদি বা ছাড়া পেয়ে পাতাল প্রবেশ করে ট্রান্সফারিং শাটলের কাছে পৌঁছলুম, তারা বলে, কলকাতা-মুম্বইয়ের বোর্ডিং পাস দেখাও, নইলে নিয়ে যাব না৷ এদ্দিন পরে সে কোথায় আছে ব্যাগে আমি কী জানি! আদৌ আছে কিনা তারই বা ঠিক কী! সেখানে এক অতিস্লথগতি তামিল প্রৌঢ়, এক তেড়িয়া চুলে-সিঙ্গাড়া মারাঠি ছোঁড়া ও উদভ্রান্ত আমার মধ্যে আরেকদফা কাউমাউ ও হাউমাউ হওয়ার পর উদ্ধার করলুম, ওদের বোর্ডিং পাস চাই না, কিন্তু খাতায় আসার ফ্লাইটের নাম্বার লিখতে হবে, নইলে সুপারভাইজার চিল্লাবে। ফোন থেকে সেটি বার করে শান্তি হল।

 

সঙ্গে ছবিটি অতঃপর নির্বিবাদে টি-১ পৌঁছে, আবার গেটে সব ব্যাখ্যা দিয়ে ঢুকে, ব্যাগ ড্রপ করে, সিকিউরিটি সেরে গুছিয়ে বসে খাঁটি বাঙালির মতো কমলালেবু খেতে খেতে থ্রিলার পড়ার আনন্দে তোলা।

 

ভাগ্যিস তিন ঘন্টা হাতে নিয়ে এয়ারপোর্ট পৌঁছই! 😜

Leave a Comment