বুঁচির গল্প
বুঁচি ইজ ব্যাক!
না, না- আমি এখনো তাকে মোটেই চিনি না। তবে কিনা, গল্প শুনেছি ঢের। সে তো আপনারাও শুনেছেন! এক অতীব ভালোমানুষ স্বাস্থ্যবতী সরলহৃদয়া যার সঙ্গে যত বিতিকিচ্ছিরি অশৈলী ঘটনা ঘটে।
সেসব ঘটনার পিছনে স্বয়ং বুঁচির যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে না তা বলছি না, তবে কিনা ওই আর কী! সূত্রপাত মোটেই বুঁচি করে না, বুঁচি মোটেও মেদিনীপুরে অমন অবিশ্বাস্য ডিজাইনের বাড়ি বানায়নি, মোটেই পা বাড়িয়ে ল্যাং খেয়ে জুতোর শুকতলা বিসর্জন দেয়নি, মোট্টেই শখ করে বাইকের পিছনে চাপেনি। এগুলো না হলে, তার পরবর্তী কীর্তিকলাপও মোট্টেই হত না!
ঠিক যেমন, এই যে বুঁচি মুম্বই এসেছে, সে কি “এইবার গিয়ে ঝক্কাস্ বোম্বেটে ছাঁট দেব চুলে” প্ল্যান করে এসেছিল? মোটেও না। কিন্তু ওই, তালেগোলে…
হয়েছিল কি, ছুটির দিন, মনমেজাজ নানা কারণে বিগড়ায়িত, বুঁচি পাওয়াই অঞ্চলে অলস পদচারণা করছিল। করতে করতে তার আচমকা মনে হল চুলটা একদম যত্ন করা হয় না আজকাল, বরং কেটে ফেলা যাক। মনে হতেই সামনে দেখে একটা অচেনা পার্লার। ওই যে, তুমি কিছু চাইলে ইউনিভার্স সেটা পাইয়ে দেয়… পাওলো কোয়েলহোর সেই বিখ্যাত বাণী ভুলভাল কোট করতে করতে বুঁচি মহা আহ্লাদে সেখানে ধাঁ করে ঢুকে গেল। ঢুকে চারদিকে চেয়ে বুঝল, পার্লারটা ইউনিসেক্স… একধারে একজন মাঝবয়সী লোকের দাড়ি সন্তর্পণে ট্রিম করা হচ্ছে, ওপাশে এক তালঢ্যাঙা যুবক আধ মাইল লম্বা পা ছড়িয়ে বসে – এক ঝুঁটিবাঁধা তরুণী মন দিয়ে তার পেডিকিওর করতে ব্যস্ত, সামনের চেয়ারে এক মহিলার হেয়ার স্পা চলছে ইত্যাদি… তো তাতে বুঁচির কিচ্ছু অসুবিধে নেই, সে তার দিকে বাড়িয়ে দেওয়া চেয়ারে জাঁকিয়ে বসে পড়ল।
অমনি, মাসলওয়ালা সুদর্শন এক তরুণ কাঁচি টাচি নিয়ে এসে বুঁচির কাছে খুউব ভদ্রভাবে জানতে চাইল, কেমন লুক চাইছেন ম্যাডাম?
বুঁচি ভারি আপ্যায়িত বোধ করল। অন্যত্র বরাবর খালি জিজ্ঞাসা করে, কী কাট হবে। এ কিনা লুক কেমন জানতে চাইছে! মানে এ ছোকরা অবশ্যই উঁচুদরের আর্টিস্ট, শুধুই অ্যাভারেজ পার্লারবালক পার্লারবালিকাদের মতো কপিবুক চুল-ছাঁটিয়ে নয়!
খুবই প্রীত হয়ে, বুঁচি বেশ বিশদে বলল, সে ঠিক কেমন লুক আনতে চাইছে।
ছোকরা ব্যাদিতবদনে চেয়ে বলল, “জি, ম্যাডাম?”
ওহো! উত্তেজনায় শেষ লাইনটা বাংলায় বলে ফেলেছে! অকুতোভয় বুঁচি তাড়াতাড়ি সেটা হিন্দিতে অনুবাদ করে দিল।
ছোকরার চোখে যে অবর্ণনীয় দৃষ্টি ফুটে উঠল, তা সমীহ ছাড়া আর কী-ই বা হতে পারে! স্পা-বিলাসিনীও পাশ থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে বুঁচির দিকে কেমন যেন ঈর্ষামিশ্রিত চোখে তাকালেন। দাড়ি-ট্রিমওলাও মনে হয় ঘাড় ফেরাতে গেছিল, ট্রিমার হাতের ছেলেটি হাঁই-হাঁই করে উঠল- লাইন উঁচুনিচু হয়ে গেল নাকি তার। শুধু তালঢ্যাঙা কানে ইয়ারফোন দিয়ে যেমন বুঁদ হয়ে ছিল তেমনি রইল।
এরপর বুঁচি যা খাতিরটা পেল না! এত সসম্ভ্রম হেয়ারকাট করানোর অভিজ্ঞতা খুব কম লোকের হয়। এমনকী পেমেন্টটা নিতে গিয়েও সে ছোকরা যেন কৃতার্থ হয়ে গেল।
গল্পটা আর খুব সামান্যই বাকি। ফুরফুরে মাথায় এবং ততোধিক ফুরফুরে মনে বাড়ির পথে বেশ কিছুদূর ফিরে যাওয়ার পর বুঁচির খেয়াল হয়েছিল, “বেশ মিচকে পাজি দেখতে লাগে যেন”র হিন্দি “বিচ্ছু য্যায়সা লাগনা চাহিয়ে” নয়।
🙂