চলার পথে – ২৪ (cholar pothe – 24)

কুমাই-চারখোল-তাকদা ভ্রমণ—পর্ব-৩
২২ মে, ২০২২, রবিবার
ঘুম ভাঙল ভোর পাঁচটা। ফুলুরির দেওয়া অভ্যাস যাবে কই! উঠেই যখন পড়েছি, আর বসে কী হবে—ভেবে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লুম হাঁটতে। এবার নিচের দিকের রাস্তায়।
পাহাড়। মেঘ। কোমরে মেঘ জড়ানো পাহাড়। মেঘ ফুটো করে উঁকি দেওয়া পাহাড়। রাস্তার ধারে হরেক নাম না জানা গাছ। বাঁশের কচি ঝাড়। পাখির ডাক। মৃদু আলো থেকে দিন ফুটে ওঠা। এসব কী আর বলে বোঝানো যায়!

১৮০ ডিগ্রি খোলা দৃষ্টিপথ জুড়ে পরের পর পাহাড়ের সারি।
পাহাড়ে কোলে মেঘ

্নাকি মেঘের কোলে পাহাড়?

মেঘের দেশে

মেঘ উঠে আসছে রাস্তায়
ফিরে এসে চান-টান সেরে তৈরি হয়ে নিলুম। গতকালই বলা ছিল একটু তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট খেয়ে বেরোব, সেইমতো সাড়ে আটটা নাগাদ খেতে বসে গেলুম। লুচির সঙ্গে আলুর তরকারিটা টোমাটোর প্রভাবে খুনখারাপি লাল, কিন্তু একটুও ঝাল না। ওমলেটে লঙ্কা ছিল, কিন্তু তিতির সেও দিব্যি খেয়ে নিল দেখি। পাহাড় একটা আলাদাই ব্যাপার আসলে!
আজ সারাদিন ঘুরব কালিম্পং-এ। প্রথম যাওয়া হল সায়েন্স মিউজিয়াম। তিতিরের খুব ভালো লেগেছে এখানের মডেলগুলো। দুঃখের বিষয় পুরো দেখা গেল না, মাঝপথে কারেন্ট চলে গেল।

সায়েন্স মিউজিয়াম, কালিম্পং

সায়েন্স মিউজিয়াম, কালিম্পং

সায়েন্স মিউজিয়াম, কালিম্পং

সায়েন্স মিউজিয়াম, কালিম্পং
তারপর যাওয়া হল ডেলো। এ তো খাসা একটা বেড়ানোর জায়গা। সেদিন আবার কীসের জানি শ্যুটিং চলছিল, বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের একটা স্থানীয় পোশাকে খুব সেজেগুজে সারি বেঁধে নাচ করছিল, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাই দেখলুম খানিক। তারপর পুরো পার্ক ঘুরতে বেশ অনেকটাই সময় লাগল। তিতির ওর মধ্যেও কোথায় কুকুর, কোথায় বেড়াল, কোথায় ঘোড়া খুঁজে পেল।

ডেলো পাহাড়ে ফুলের বাহার
শ্যুটিং চলছে

ডেলোয় বিশ্রাম

ডেলো হাউস

ইনি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন ডেলোর মাঠে। একটু হাত দিতেই তড়িঘড়ি এমন শুয়ে পড়লেন আদর খাওয়ার জন্য।

বললুম গাছ দুটোর সঙ্গে ছবি তুলে দে। তা বলে এমন হাঁড়িকাঠে গলা দেওয়ার ভঙ্গিতে তুলবে!
সেখান থেকে গেলুম ‘গ্রাহাম’স হোম’, একটা স্কুল ক্যাম্পাস। নিরিবিলি, ছবির মতো সুন্দর। বেশ লাগল।

গ্রাহাম’স হোম, স্কুল

স্ক্লের অংশ
এরপর আমি গোঁ ধরে বসলুম, ‘গেডেন থার্পা চোলিং মনাস্ট্রি’ যাব। যাবই।
এদিকে বিজনদা তো বটেই, রাস্তার লোকেও সেভাবে তার নাম জানে না। আমিও ছাড়ার পাত্রী নই, এক এক করে জিজ্ঞাসা করতে করতে একজন ‘ও চোলিং মনাস্ট্রি যানা হ্যায়!’ করে উঠল। তারপর তার দেখানো পথ দিয়ে পাঁচ মিনিট যেতেই পাওয়া গেল সেই মঠ।
কী বলছেন? গুগল ম্যাপ? আরে, এসব পাহাড়ি পথে আদ্ধেক জায়গায় নেটওয়ার্কই নেই তো গুগল। তারপর, যদি বা ম্যাপ চলে, তাতে দেখছি একটাই সোজা পথ আর চোখের সামনে দেখছি রাস্তার ডাইনে বাঁয়ে কত ফ্যাকড়া বেরিয়েছে যেগুলো ম্যাপে স্রেফ নেই-ই! কাজেই ও দিয়ে এসব জায়গায় খুব একটা সুবিধা হয় না, লোকাল মানুষদের জিজ্ঞাসা করাই সেরা উপায়।
মনাস্ট্রিটা, এদিকে এলে অবশ্যই যাবেন।

থার্পা চোলিং মনাস্ট্রি
১৯১২ সালে স্থাপিত এই তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের গেলুক ধারার মঠটি সরাসরি দালাই লামার প্রাইভেট অফিস দ্বারা পরিচালিত হয়। তিব্বতী, শেরপা, তামাং, গুরুং – নানা গোষ্ঠীর সন্ন্যাসী আছেন এই মঠে।
মঠের মূল কক্ষটি সুন্দর তো বটেই। বড়ো পিতলের তিন বুদ্ধমূর্তি—যে লামা আমাদের ডেকে নিয়ে গিয়ে সব দেখান, তিনি তিতিরকে বোঝান, এই তিন বুদ্ধ অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ। বুদ্ধ ছিলেন, আছেন, থাকবেন।
দেওয়াল জুড়ে ছবি, কী তার রঙ, কী তার ঔজ্জ্বল্য! পেমিয়াংসি মনে পড়ে যায় দেখে। লামা এক এক করে ছবির মধ্যে দেখান, অবলোকিতেশ্বর, বুদ্ধের উপদেশ দান, বৌদ্ধ তান্ত্রিক ধারার কালীমূর্তি।
কিন্তু সে তো পরে। তার আগে, আমাদের ডেকে নিয়ে স্বল্পভাষী লামা তরতর করে সিঁড়ি ভেঙে চলে গেছেন উপরে। কী, কেন – কিচ্ছু না বুঝেই আমরাও গেছি সঙ্গে।
তালা খুলে দেখান, মিউজিয়াম এক।
ছোট্টর মধ্যেই কী সংগ্রহ! চারশো-পাঁচশো বছরের পুরোনো জিনিস সব দেখি আর হাঁ হয়ে যাই। মুদ্রা, নেপাল, তিব্বত, ভারতের। আধখানা, সিকিখানা করা মুদ্রা। কাগজের নোট, বিশাল বড়ো বড়ো। সোনার জল দিয়ে আঁকা থাঙ্কা সারি সারি, কোথাও বুদ্ধ অভয় দিচ্ছেন, কোথাও চীনা ড্রাগনের মতো কিছু নাচছে। কারুকার্য ভরা ছোটো ছোটো পদ্মসম্ভব, শ্বেত তারা, যমন্তক মূর্তি, রাহু। বর্তমান দালাই লামার চার বছর বয়সের ফোটোগ্রাফ। চীন আক্রমণে উদ্বাস্তু হয়ে আসা তিব্বতীদের সারি দিয়ে পাহাড় পেরোনো, অস্থায়ী ক্যাম্পের ফোটো। শিলালিপি। কাপড় ছোপানোর কাঠের ব্লক। জেড পাথরের বাটি। সেই কোনযুগের ইয়াব্বড়ো ক্যামেরা, হাতলওলা। পাশাখেলার বোর্ড আর ঘুঁটি।
দেখে দেখে পলক পড়ে না। বড়ো আনন্দ হয় দেখে যে তিতিরও বেজায় আগ্রহ নিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে, আমি কিছু মিস করলে জামা টেনে ধরে দেখিয়ে দিচ্ছে সেটা। সেই কোন ছোট্ট থেকে ট্যাঁকে করে মুম্বই পুনে কলকাতা সব জায়গায় মিউজিয়ামে ঘোরানোর সুফল।

মনাস্ট্রি থেকে নিচের দৃশ্য
অনেক সময় নিয়ে এসব দেখে, খুব সন্তুষ্টচিত্তে গাড়িতে উঠলুম। এতটাই ভালো লেগেছিল, যে মর্গান হাউসে গিয়ে ভিতরে যাওয়া যাবে না, এবং দূরপিন মনাস্ট্রি এখন বন্ধ আছে শুনেও একটুও খারাপ লাগল না। মর্গান হাউসের সামনে একটা ছবি তুলে নেওয়া হল, তিতির বলে রাখল, এই ‘ভূতিয়া হাউসে’ পরে এসে থাকতে হবে।

মর্গান হাউসের সামনে
ততক্ষণে পেটে হেব্বি ইঁদুড় দৌড়চ্ছে, তিনটে বেজে গেছে যে! সঙ্গে আনা কলা কেক বিস্কুটে টুকটাক মুখ চালালেও, লাঞ্চটি তো হয়নি!
আজ কিন্তু মোমো খাব।
কালিম্পং মার্কেটে নেমে তেমন একটা দোকানেই লাঞ্চ খাওয়া হল। টমেটো স্যুপটা আমাদের চেয়ে অন্যরকম, টমেটো পেস্ট করার পর ছাঁকা হয়নি, স্বাদও আলাদা। ধোঁয়া ওঠা চিকেন মোমো মাখনের মতো নরম, আর বাইরে মুচমুচে ভিতরে ঝিরিঝিরি ক্যাপসিকাম গাজর চিজের পুর দেওয়া এগ-রোল ‘স্বর্গের সুরুয়া’র জাতভাই।
তারপর ফেরা আবার সেই মেঘের দেশে। আবার পাহাড়ি পথে, পাইনের রাস্তায় অল্প হাঁটাহাঁটি।

হোম স্টের পাশে পাইনবনের পথ
তারপর ডিনারের ডাক না আসা অবধি নিজেদের সঁপে দেওয়া বই আর লেপের আদরে। হাসবেন না। এই ট্যুরে এত ঘোরাঘুরির পরেও সাতদিনে পাঁচটা গোটা বই শেষ করেছি, তিতিরও গোটা তিনেক।
আবার সেই হাত-চাটতে-বাধ্য-হওয়া চিকেন, আবার বেশি খাওয়া, আবার ভীষণ তৃপ্তির ঘুম, এক ঘুমে রাত কাবার।
২৩ মে, সোমবার
যথারীতি পাঁচটায় উঠে পড়া গেল। আলো কিন্তু তখনই বেশ ফুটে গেছে। ঘরে রাখা চায়ের সরঞ্জাম দিয়ে চা করে খেয়েই বেরিয়ে পড়া। সেই নিচের রাস্তায়, আজ আরও অনেকটা দূর অবধি। আজও তেমনই, মেঘ পাহাড়ে লুকোচুরি রয়েছে বটে, কিন্তু মেঘের ভাগ কম। দিন ঝকঝকে হবে মনে হয়।

চারখোল। আজ মেঘ কম।

পাহাড় যেন কাছে এসে গেছে তার ফলে।

ওই নিচে আমার বাড়ি- পথচলতি উচেনা মানুষ ডেকে দেখায়।

মর্ণিং ওয়াকের রাস্তা
পথে কত স্থানীয় লোকের সঙ্গে আলাপ হয় আজ। কেউ নিজে ডেকে আলাপ করেন, কোথা থেকে আসছ? কোথায় যাবে? কেউ পাশে পাশে পা মিলিয়ে চলতে চলতে গল্প করেন, ওই গাছটার কাছে যেও না, আঠা লাগলে ঘা হয়। ওই সামনের ঢালে আমার বাড়ি, জানো তো আমরা কত পুরুষ আছি এখানে? কিচ্ছু ছিল না এসব তখন… এদিকে আর কোথায় কোথায় গেছ? সিটং যাওনি? যেও, খুব সুন্দর জায়গা। আবার কারও সঙ্গে বা আমিই ডেকে কথা বলি, ও দিদি, ঘাস কি বকরি খাবে? দিদি কাজ থামিয়ে একগাল হেসে বলে, ছাগলও খাবে, গরুও খাবে। আমার দুটোই আছে যে! গলার মিঠে গর্বের সুরের সঙ্গে দুলতে থাকা কানের বড়ো কানবালা চকচক করতে থাকে। খুব লোভ হয় একদম নেপালী পোশাকের মাঝবয়েসী মহিলাটির ছবি তুলতে, কিন্তু তিনি লজ্জা পেয়ে মুখের সামনে হাত নেড়ে না না করতে থাকেন। অগত্যা জিজ্ঞাসা করেই তাঁর ঘাস নিয়ে যাওয়ার টোকরিটার ছবি তুলি।

টোকরি
ফিরে এসে ব্যাগ গুছোই, ব্রেকফাস্ট করি। হোমস্টের দিদি পাশে এসে খোঁজ নেন কাল কেমন বেড়ালুম, কী কী দেখলুম। প্রথম দিনে আলাপ হওয়া শেরাপ বোঁ করে ঘরে ঢুকে কী যেন নিয়ে এক ঝলক হেসে আবার বেরিয়ে যায়। একটু একটু মন কেমন করে। ঘরে ফিরে স্নান করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ি। গাড়িতে ওঠার আগে একটা ছবি তুলে নিই বাড়িটার।

চারখোলের চন্দ্র আদিত্য হোমস্টে
আজ যাব তাকদা, আমাদের শেষ গন্তব্য। জায়গাটার আসল নাম আগে ছিল তুকদা, লেপচা ভাষায় যার মানে ‘মেঘ আর কুয়াশায় ঢাকা জায়গা’।
ও না, সরাসরি যাইনি। পথে এল লাভার্স মীট ভিউ পয়েন্ট – রঙ্গিত আর তিস্তার সঙ্গমস্থল।

লাভার্স মীট ভিউপয়েন্ট
তারপর দেখা গেল লামাহাট্টা-টাও রাস্তায়ই পড়ছে, তাই সেটাও আজই দেখে নেওয়া হল যাবার পথে। বিশাল বিশাল সব গাছে ভরা পার্ক। ৭৫০ মিটার উঁচুতে যেতে পারলে লেক দেখা যায়—তার অনেকটাই উপরে চড়েছিলুম আমরা, হয়তো পুরোটাই চলে যেতে পারতুম, কিন্তু বৃষ্টি এসে গেল। তবে যতটা গেছিলুম সেও ভারি সুন্দর।

লামাহাট্টা ইকো পার্ক

‘যত আদিম মহাদ্রুম’
তাকদা পৌঁছনোর রাস্তার শেষভাগটা বেশ খারাপ। যেমন খাড়া উৎরাই, তেমনি অমসৃণ, পাথরে ভরা। ভয়ে ভয়ে আস্তে আস্তে নেমে কোনওমতে পৌঁছনো গেল এস পি প্রধানের হোমস্টে – Woods at Cantonment. ব্রিটিশ আমলের বাংলো, সারিয়েসুরিয়ে এখন হোমস্টে।
গেটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল চিরাগ প্রধান, এই হোমস্টের মালিকের ছেলে। গাড়ি এসে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই দুজন না তিনজন লোক দৌড়ে এসে হাতে হাতে সব মাল নিয়ে গেল। তিতির তো নেমেই আহ্লাদে পাগল হয়ে যাবার দশা, একপাশে খাঁচা করে বেশ কিছু খরগোশ আর গিনিপিগ, আর সামনেই গোল পুকুর ভরে লাল নীল মাছের দল। যখন জানা গেল ও ইচ্ছেমতো খরগোশদের ঘাস খাওয়াতে পারে, মেয়ের মুখ দেখে বুঝলুম একে ঘুরতে যাওয়ার সময়ে ওই খাঁচার পাশ থেকে সরাতে রীতিমতো বেগ পেতে হবে।

তাকদা- উডস অ্যাট ক্যান্টনমেন্ট হোমস্টে, ছোট্ট ঘরটা কফিহাউস

তাকদা- উডস অ্যাট ক্যান্টনমেন্ট হোমস্টে, সামনে থেকে

তাকদা- উডস অ্যাট ক্যান্টনমেন্ট হোমস্টে, থাকার ঘরের দিক
চিরাগ আলাপ করিয়ে দিল তার বাবার সঙ্গে, স্যুট পরা স্মার্ট সত্তর বছরের যুবকটি আর্মিতে কাটিয়েছেন চিরকাল, এখনও ছাড়া পাননি পুরোপুরি। খুবই আলাপী, আমাদের খোঁজখবর নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের মিলিটারি জীবনের টুকটাক গল্পও শুনিয়েছেন এই দুদিনে। তাঁর স্ত্রীও খুবই মিশুকে মানুষ।
ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে এলুম, বেশ বেলা হয়েছিল। মেন্যু সেরকমই, ভাত, আলু-বেগুন, ডাল, পাঁপড়, স্যালাড আর ডিমের ঝোল। কিন্তু পরিমাণ দেখে ভিরমি যাই আর কী, আমরা দুজনে দুবেলা খেলেও ফুরোবে না। তার উপর নেপালী কুক এসে এসে বারবার সাধাসাধি করতে লাগল আরও নাও, এটা নাও, ওটা নাও, আরেকটু স্যালাড কেটে আনি…
রান্না বড়োই সরেস। খুব সিম্পল, তেল মশলা কম, কিন্তু অত্যন্ত স্বাদু।
বিকেলের আলো পড়ে এসেছিল, আঙ্কল আমাদের বেরোতে বারণ করে দিলেন, কারণ সামনেই নিবিড় জঙ্গল আর সেখানে মাঝেমধ্যেই নাকি গুলবাঘ (লেপার্ড) আসে। তাই ওই খরগোশ আর মাছ নিয়েই যেটুকু দিনের আলো বাকি ছিল, কাটল। একটা দোলনাও ছিল একপাশে, তাতেও বসা হল কিছুক্ষণ।

খরগোশ

লাল মাছ
চায়ের সময় হল, বাগানের মাঝে পুরোনো ‘কফি হাউস’ খুলে দিলেন আন্টি, আলো জ্বালিয়ে দিলেন।

সন্ধের চা কফি খাওয়ার জায়গা, ছোট্ট কফিহাউস
ছোট্টো ছ কোনা ঘর, দেয়াল বরাবর সরু সরু বেঞ্চি (আমার পক্ষে বড্ড সরু), একটা টেবিল মধ্যে। তার উপরে চা আর পকোড়া সাজিয়ে দিয়ে গেল কুক। সে পাট সেরে বেরিয়ে আলাপ হল ওঁদের মেয়ে আর তার ছেলে-মেয়ের সঙ্গে। দুজনেই ছোটো তিতিরের চেয়ে, ক্লাস টুয়ের মেয়েটি লাজুক, আপার কেজির ছেলেটি তার চেয়েও লাজুক। আর তাদের চেয়েও লাজুক হল উপস্থিত থাকা পরিবারের সবচেয়ে ছোটো সদস্য, ছ মাসের সেন্ট বার্নার্ড কুকুরছানাটি। অপরিচিত আমাদের দেখে সে নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে বলে বেশিক্ষণ দাঁড়ালুম না তার কাছে।
ঘরে ফিরে আবার গল্পের বই, হুটোপুটি খেলা, ছবি আঁকা। ছোট্ট কেটলে জল গরম করে নিয়ে কফি আর হরলিক্স, একটু চানাচুর বাদাম বা চিপস দুজনে ভাগাভাগি করে। এ ট্রিপে আমিও গুটিকয় স্কেচ করেছি পাহাড়ি পথের, দেখাব পরে। কন্যার আঁকা তো জয়ঢাকে পাবেন, জানেনই।
এটা বেড়ানোর সেই পর্যায়, যখন মন এতটাই ভরে আছে যে কিচ্ছুটি না করে স্রেফ বসে বসে এ কদিন কী দেখেছি গল্প করার মধ্যেও অথৈ আনন্দ।
আজ রাত্রে ভাত খাওয়া হয়। মখমলের মতো মোলায়েম চিকেন। কুক (নামটা জানা হয়নি) এসে তিতিরের পছন্দ জেনে যান, পরদিন স্পেশাল ডিনার খাওয়াবেন বলেন। কী স্পেশাল? চোখ প্রায় বুজে ফেলে মিটিমিটি হেসে বলেন, কালই দেখবেন।
আরামে ঘুমোনোর আগে আরও একটা বই শেষ করি সেদিন।
(ক্রমশঃ)

