এলোমেলো কথা

এলোমেলো কথা

কেমন যেন ঘূর্ণিপাকে চলছে জীবন। এই যে গত শনিবার কত্তকাল পরে কলেজ স্ট্রীটে, প্রিয় মানুষদের সঙ্গে, বইয়ের মাঝে কাটিয়ে এলুম, এই আমিই শুক্রবার সন্ধ্যায় ছিলুম মুম্বই এয়ারপোর্টে। শনিবারের ছবি-টবি সব তো দেখেই ফেলেছেন, আজ বরং বলি আমার যাযাবর জীবনের ‘অন্য শহর’টির কথা।

মুম্বইতে বৃষ্টি নেমেছিল গত সপ্তাহে। মুম্বইয়ের বৃষ্টি মানে সত্যিই বোম্বেটে ব্যাপার। যে তীব্র ধারায়, যেমন অঝোরে সে ঝরে, তাতে মুহূর্তে সব নিচু রাস্তা জলে থইথই হয়ে যেতে বাধ্য। পাওয়াই হিরানন্দানির মত চকচকে, নিয়মিত শ্যুটিং হওয়ার মত সুন্দর সুদৃশ্য অঞ্চলেও জলস্রোত বয়; গাড়ি ছুটে যায় জল ছিটকে; পাছে জল ঢুকে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় তাই অটোরিকশা ভয়ে ভয়ে মাঝখান দিয়ে চলে। সে অবিশ্রান্ত তুমুল বৃষ্টির সঙ্গে আবার যোগ দেয় হাওয়া। ঝোড়ো, তেজী হাওয়ার দাপটে গাছ পড়ে, তার ছেঁড়ে, অতটা যদি নাও হয় তো পথে কারও হাত থেকে ছাতা উড়ে যায়, কারো ছাতা হুট করে উলটে যায়।

সে বৃষ্টি বড়ো মনকেমনিয়া। পিছনে ফেলে গেছি যে দিনগুলো, যে সরল, মানুষকে বিশ্বাস করতে অভ্যস্ত, সহৃদয় মেয়েটিকে – তার জন্য মনকেমন করে। তার না-পাওয়াগুলোর জন্য, ঠকে-যাওয়াগুলোর জন্য মনকেমন করে। ঝকঝকে এয়ারপোর্টে সুসজ্জিত মানুষদের ভিড়ে বসেও সে মনকেমন বৃষ্টি হয়ে বুকের মধ্যে ঝরে।

সন্ধ্যা নামে। প্লেন ওঠা নামার দৃশ্য কাচের ওপারে আঁধারে মুছে আসে। ব্যাগ তুলে এগোই। ডাক পড়েছে। নাড়ির টান, কলকাতায় ফিরে যাব।

এই যাতায়াতের মাকু চলাচল, এই না-পাওয়ার বিষাদ আর অজস্র অভাবিত প্রাপ্তির আনন্দ’র টানাপোড়েনে জীবন তার ইচ্ছেমতো গল্প বুনে চলেছে। সে গল্পের শেষপ্রান্তটি যেদিন পেরোব, রঙ্গমঞ্চের পালা শেষ হবে, সেদিন শেষ টান দিয়ে বুননটি সে টাঙিয়ে দেবে মঞ্চের সামনে – একমাত্র তখনই বোঝা যাবে ফুটে ওঠা সম্পূর্ণ নকশাটি।

সেটি যেন সুন্দরও হয়, এটুকুই স্বপ্ন দেখে যাই।

Leave a Comment