মাতৃয়ার্কি
মাতৃয়ার্কি
( শব্দটা নবনীতা দেবসেনের লেখা থেকে ধার নেওয়া)
————————————–
আমার মাতৃদেবী সব ব্যাপারে আমার শতগুণ এগিয়ে। সে দাপটে সম্বলপুর ত্রিবেণী হিরাকুদ জামশেদপুর ঘুরে ঘুরে অফিসের কাজ সামলানোই হোক, ভোরবেলা উঠে ছানা বানিয়ে রসগোল্লা করে তাই দিয়ে রসগোল্লার পায়েস বানিয়ে ফেলে তাই প্যাক করে নিয়ে সময়মত অফিস পৌঁছে যাবার মত অঘটনঘটনপটিয়সী রান্নাতেই হোক, বাড়ি অফিস আর একটা আহ্লাদী মেয়ে সব সামলে রাত জেগে বসে বসে সূক্ষ্ম কাঁথা স্টিচের কাজে আস্ত একটা শাড়ি বানিয়ে ফেলাই হোক, কি নিজের বাড়ি মামাবাড়ি নিজের শ্বশুরকুলের মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সব তুতো তুতো তস্য তুতো লোকজন, বন্ধু, বন্ধুর বন্ধু, বন্ধুর বন্ধুর বন্ধু ইত্যাদি প্রভৃতি সব নিয়ে বছর বছর নিখুঁত পিকনিক অ্যারেঞ্জ করে ফেলাই হোক! যেমন বুদ্ধিমতী কর্মকুশলী, তেমনি প্রবল ব্যক্তিত্বশালিনী, যেজন্য তাঁর এক কোলীগ একদা বলেছিল “ডালিয়াদিকে ভূতেও ভয় পাবে।”
তা এহেন মহিয়সী তেজস্বিনী মহিলাকে আমি কিন্তু একবার জব্বর জব্দ করেছিলুম।
“সে তুমি যাই বলো না কেন মা, দুটো ব্যাপারে তুমি আমার কাছে হেরে ভূত হয়ে আছো!”
এই ন্যালা ক্যাবলা, কাজেকম্মে তাঁর কাছে ‘ঢ্যাঁড়শ’ উপাধি পাওয়া মেয়ের এহেন স্পর্ধায় তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠার আগেই ব্যাখ্যা শুনলেন,
“আমার মেয়েও তোমার মেয়ের চেয়ে ঢের সরেশ, আর আমার মাও তোমার মায়ের থেকে ঢের বেশি ভাল!”
ওই একবারই, মাতৃদেবীকে চুপ করিয়ে দিতে পেরেছিলুম।